মাহবুব আলম প্রিয় : শীতের বিদায় লগ্নে অনেকটা বেকার লেপতোষকের কারিগর। আর তাই জীবিকার তাগিদে গ্রামে গ্রামে ফেরী করে খুঁজছেন কাজ। পুরানো লেপ তোষকের সেলাই, তুলা বিক্রি ও নতুন তৈরীর জন্য গ্রামের পথে পথে বাড়ি ঘরে তাকিয়ে হাঁকছেন “লেপ তোষক সেলাই করি, নতুন বিছানা তৈরী করি”। মাঝে মাঝে পাচ্ছেন কাজ । আর কাজ না পেলে দল করে হাটাই হয় জীবিকার সন্ধানের প্রচেষ্টা।নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গ্রামে গ্রামে দেখা মেলে এমন লেপতোষক কারিগরদের।
হাট বাজারের লেপ তোষক ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শীতের আগমনের ১ মাস পূর্ব থেকেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় এর কারিগরদের। এসব কারিগররা বছরের ৪ মাস পুরোদমে তেপ তোষক তৈরীর কাজ করেন। বাকি সময় অনেকটাই অলস কিংবা ভিন্ন কাজ করে চলে তাদের সংসার। লেপ তোষক, বালিশ ভিত্তিতে এসব কারিগরদের মুজুরী নির্ধারন করায় স্থায়ী কর্মসংস্থান নেই তাদের। তাই বিভিন্ন দোকানের সঙ্গে চুক্তি করে কাজ পান তারা । এতে অতিপ্রয়োজনীয় বস্তু উৎপাদনে এমন কারিগরদের বছর ব্যাপি স্থায়ী কর্মসংস্থান না থাকায় এদের একদল ঘরে ঘরে কাজ কুড়াতে হয়ে যান ফেরীওয়ালা।
শীতের শেষ মুহুর্তে কর্মহীন হয়ে পড়া কারিগরদের দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। আর তাই বাধ্য হয়েই ফেরীওয়ালা কারিগর হিসেবে গ্রামে গ্রামে ঘুরেন কাজের জন্য।
এমন এক লেপ তোষক কারিগর উপজেলার চনপাড়া পূনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, বাবার কাছ থেকে শেখা ৩০ বছর ধরে লেপ তোষক তৈরীর কাজ করি। অন্যকাজ না জানায় চনপাড়া বাজারে একটি লেপতোষকের দোকান খুলি। কিন্তু বছরে কেবল শীতের সময় সর্বোচ্চ ৪ মাস কাজ থাকে। সে সময় ভালোভাবে সংসার চালালেও বাকি সময় দোকানে কর্মচারী ও কারিগর রাখা দায় হয়ে যায়। ফলে জীবিকার তাগিদে বাড়ি বাড়ি ঘুরি, ডেকে ডেকে কাজ খুঁজি। এভাবে কয়েক গ্রাম ঘুরলে দুএকটি কাজ পাই। এভাবেই চলে আমাদের এ পেশা রক্ষার কাজ। তিনি আরো বলেন, যত ভালো কাপড়ই দেই বা ভালো কাজ করি, ফেরীওয়ালা কারিগর বলে বিশ্বাস কম করে। তাই গ্রামে গ্রামে ঘুরলেও আশানুরুপ কাজ পাওয়া যায় না।
অপর ফেরীওয়ালা কারিগর সুজন মিয়া বলেন, হাট বাজারে দোকান দিয়ে যারা লেপতোষকের ব্যবসা করেন তারা শীতের সময় বেশি মুল্য রাখেন। তবু বেশির ভাগ লোক প্রয়োজনের সময় বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়েই কাজ করান। আর যারা ফেরী করে কাজ করি প্রায় অর্ধেক মুজুরীতে কাজ করি। কারন এ সময় তেমন কাজ থাকে না।
সূত্র জানায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ৭০টি অধিক হাট বাজারে ২শতাধিক এমন লেপ তোষক ব্যবসায়ীর অবস্থান রয়েছে। তাদের অধীনে রয়েছে ৩শতাধিক কারিগর। যাদের স্থায়ী কর্মসংস্থান না থাকায় অনেকেই মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে এমন কাজে যুক্ত।
মধূখালী এলাকার বাসিন্দা মাহিরা তাসফি প্রভা বলেন, শীতের সময় খুব দরকার হলেও শ্রমিক পাওয়া যায় না। আর শীতের শেষের দিকে প্রতি বছর ফেরীওয়ালা হিসেবে এমন শ্রমিকদের পাওয়া যায়। এতে সুবিধা বেশি বাড়িওয়ালাদের। কারন, পরিবহণ খরচ ছাড়া কম দামে অর্ডার ভিত্তিতে বাড়িতে বসেই সেবা পাওয়া যায়।