মাহবুব আলম প্রিয় : কৃষিক্ষেত খামারের ফসল বিক্রি করে বছরব্যাপি সংসার চালাতো যে কৃষক কিংবা বর্তমান বাজারে যে জমির মুল্য কোটি টাকার অধিক ; সর্বনাশা জুয়ায় আসক্ত হয়ে এমন সব মুল্যবান জমি ও অর্থ হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে বহুজন। এমন ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়নের গুতিয়াবো গ্রামের ১০এর অধিক কোটিপতি কৃষক এখন নিঃস্ব প্রায়। অভিযোগ রয়েছে, এক সময় তাদের মালিকানায় ১০ থেকে ৩০ বিঘার অধিক জমি থাকলেও দীর্ঘদিন জুয়া খেলে জুয়ার বাজিতে সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তারা।
সময়ের ব্যবধানে সেই জুয়ারীরা অনুতপ্ত হলেও তাদের সম্পদ ফিরে পাবে না। তাছাড়া সামাজিক লজ্জায় তাদের অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন।
সরেজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গুতিয়াবো আগারপাড়া এলাকার রফিজুদ্দিনের ছিলো প্রায় ২০ বিঘা সম্পত্তি। ছেলে ওয়াজদ্দিন জুয়ায় আসক্ত হলে পিতাকে জিন্মি করে টাকা আদায় করতো।
সন্তানের অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে বাধ্যহয় তরিঘড়ি করে জমি বিক্রির জন্য। তবে একই গ্রামের চতুর মাতাব্বরেরর খপ্পরে জালিয়াতির শিকার হয়ে ওই জমি হারায় তার বাবা। পরে ওয়াজদ্দিনের দখলে থাকা বাকি জমি বিক্রি করে জুয়ায় বাজি ধরে ধীরে ধীরে সব হারিয়ে ফেলে। এসব চিন্তায় সে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। পরে প্যারালাইসিস হয়ে এখন হুইল চেয়ারে চলাচলা করে। তার সংসারে ২ মেয়ে রয়েছে। এলাকাবাসির দাবী ওয়াজদ্দিন ৩টি বিয়ে ৩ স্থানে করেছিলেন। এখন সব হারিয়ে পরের বাড়িতে দয়াপরাবশ হয়ে বসবাস করছেন।
সরেজমিন ঘুরে গুতিয়াবো নামের একই গ্রামের আরো ১০ জনের অধিক কৃষকের একই পরিণতির খবর পাওয়া যায়। যারা বর্তমান বাজার মুল্যের ৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক ছিলো। এদের মাঝে আজিমদ্দিনের ছেলে মনির হোসেনের ৩০ বিঘা সম্পদ ছিলো। জুয়া খেলে একে একে সব জমি বিক্রি করে সে নিঃস্ব হয়ে যায়। একইভাবে একই গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সময়ের কোটিপতি কৃষক ৩দিন জুয়া খেলার নেশায় একই আসরে বসে থেকে না খেয়ে মৃত্যু বরণ করেন। আবার আলী মিয়ার ছেলের মাঞ্জুর মিয়ার গত ১১ বছরে ৩০ বিঘা জমি বিক্রির সব টাকা জুয়ায় হারিয়ে ফেলে। এভাবে আয়েব আলীর ছেলে ফারুকসহ ১০জনের অধিক কৃষকের ঘটনা একই রকম।
সূত্র আরো জানায়, মধূখালী এলাকার ৫০ বিঘার উপরের জমি মালিক আলীমুদ্দিনের ২ ছেলে জুয়ারী আফাজ্জদ্দিন ও মহিজদ্দিন। আলীমুদ্দিন মারা গেলে ওয়ারিশ সূত্রে একেক ভাই ১৫ বিঘা করে জমি প্রাপ্ত হয়। পরে দীর্ঘ ১৩ বছরের জুয়ায় একে একে তার পিতার রেখে যাওয়া সব জমি স্থানীয় আবাসনে বিক্রি করে তারা এখন নিঃস্ব। থাকে উলুখোলা এলাকায় একটি ভারা বাসায়। কাজ করে ভাসমান মাছ বিক্রেতা হিসেবে।
একইভাবে সুরিয়াবোর এলাকার মৃত ইন্নত আলীর ছেলে মোক্তার হোসেন। একে একে ৬টি বিবাহ করা জুয়া খেলে নিজের সব হারিয়ে সে এখন সর্বহারা । সম্পদ না থাকায় স্ত্রীরাও নেই তার পাশে।স্থানীয় সূত্র জানায়, জাঙ্গীর মৌজায় মোক্তার হোসেন তার পৈত্রিকভাবে সম্পদ প্রাপ্ত হয় ৪ শতকের। সে জমিতে মাটির ঘর করে সুরিয়াবো এলাকায় বসবাস করে আসছিলো । জুয়া খেলতে খেলতে এক শতক করে ৪ বারে ওই সম্পদ বিক্রি করে দেয় প্রতিবেশি ও স্থানীয় আবাসন কোম্পানীর কাছে।
কথা হয় জুয়ারী ওয়াজদ্দিনের সনে। তিনি বলেন, এক সময় জুয়া খেলতাম। পরের অসুস্থ্য হয়ে যাই। এখন আমি প্রতিবন্ধি। উপজেলা থেকে ভাতা পাই। ভিক্ষে করি। আগের কথা মনে হলে লজ্জা হয়।
এসব বিষয়ে ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মোরশেদ আলম বলেন, গুতিয়াবো আগার পাড়া এলাকায় এক সময় যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ছিলো না। ফলে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন আসতে পারতো না। এতে এ এলাকায় মাদক ও জুয়ার আড্ডা বেড়ে যায়। এতে বহু লোক জমি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে যায়। বর্তমানে পুলিশের যাতায়াত থাকায় গোঁপনে জুয়া খেলা চলেই। ডিজিটাল জুয়া বেশি চলে। এসব বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন।
অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা কোথাও একটি পক্ষকে মাসোয়ারা দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্পটে চলছে জুয়ার আসর। আর দিন দুপুরে হাটে বাজারের চায়ের দোকানে বসে আইপিলসহ বিভিন্ন খেলার মাধ্যমে বাজি ধরে চলে জুয়া এতে বহু নিন্ম আয়ের মানুষজন সর্বনাশা জুয়ায় ঝুঁকে গেছে। এছাড়াও মোবাইলে বিভিন্ন প্রকার সফটওয়ারের মাধ্যমে ঘরে বসে কিশোর শ্রেণির লোকজন জুয়ায় মত্ত হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়কে সামাজিক অবক্ষয় বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, এখন রূপগঞ্জে প্রকাশ্য জুয়ার বোর্ড বা আড্ডা নেই বললেই চলে। তবে ডিজিটাল জুয়া বা মোবাইলে বিভিন্ন খেলাধূলার মাধ্যমে জুয়া খেলার কথা জেনেছি। এসব বিষয়ে পুলিশের একটি টীম কাজ করছে। জুয়া কখনো ভদ্র সমাজে টিকে থাকতে দেয়া ঠিক নয়। তাই এসব বিষয়ে আরো সজাগ দৃষ্টি রাখবে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ।